কতটা জনপ্রিয় হলে ইউপি চেয়ারম্যান থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়া যায় তার দৃষ্টান্ত উদাহরণ খন্দকার সাইফুল ইসলাম বুড়ো। তাও আবার দুই দুইবারের প্রভাবশালী উপজেলা চেয়ারম্যানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে। বলছিলাম রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল ইসলাম বুড়োর কথা। এর আগে তিনি মাছপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন।
গত ৮ই মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাংশা উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান পদে মোটর সাইকেল প্রতিক নিয়ে অংশ গ্রহণ করে তিনি ৫৪হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ ফরিদ হাসান ওদুদ আনারস প্রতিক নিয়ে ৩৫হাজার ৯৪২ ভোট পেয়ে বড় ব্যবধানে তার কাছে পরাজিত হন।
খন্দকার সাইফুল ইসলাম বুড়ো ১৯৬৩ সালে পাংশা উপজেলার রামকোল বাহাদুরপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৃত খন্দকার মকবুল হোসেন ও মায়ের নাম মৃত খন্দকার হাসিনা বানু।
তার বড় ভাই খন্দকার নুরুল ইসলাম ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। তার দাদা মৃত খন্দকার তালিবুর রহমান তৎকালীন মেঘনা বোর্ডের (বর্তমানে যশাই ও মাছপাড়া ইউনিয়ন) প্রায় ৭০ বছর যাবৎ পঞ্চায়েত প্রধান এবং ঋণ শালিসী বোর্ডের সভাপতি ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবনে খন্দকার সাইফুল ইসলাম বুড়ো দীর্ঘদিন ধরে পাংশা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি পদে দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি পাংশা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি মাছপাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে দায়িত্বে রয়েছেন।
খন্দকার সাইফুল ইসলাম বুড়ো ১৯৯২ সালে মাছপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ৫বার একই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। এই ৫বার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেন। ফলশ্রুতিতে ভালকাজের পুরস্কার স্বরুন শ্রেষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যানসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। সাধারণ মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার ও ভাল আচরণের কারণে তিনি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়ে উঠেন। যার কারণে সীমান্তবর্তী উপজেলার বাসিন্দা হয়েও তিনি এবার সাহসিকতার সাথে পাংশা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন এবং বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল ইসলাম বুড়ো বলেন, আমাদের আজকের এই জয় পাংশাবাসীর জয়। এই জয়ের পেছনে যার সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল তিনি হলেন, আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের পুত্র আশিক মাহমুদ মিতুল। এই নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী অনেক শক্তিশালী ছিলেন। নির্বাচনে জিততে তিনি অনেক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে ছিলেন। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এবং সাধারণ জনগণের রায়ে শেষ পর্যন্ত আমি বিজয়ী হয়েছি। এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক খন্দকার সাইফুল ইসলাম বুড়ো শুধু একজন ইউপি চেয়ারম্যানই ছিলেন না। তিনি একজন সামাজিক এবং শিক্ষা অনুরাগী মানুষ। একটি শিক্ষিত সমাজ গড়ার প্রত্যয় রয়েছে তার মধ্যে।
এ ব্যাপারে মাছপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, এলাকার দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে অর্থের অভাবে ঝরে না যায় সেজন্য তিনি অনেক গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন। এছাড়াও তার সবচেয়ে বড়গুণ হচ্ছে বিচারকার্য। বিশেষ করে গ্রাম আদালতে দলমত নির্বিশেষে বিচারকার্য পরিচালনা করার কারণে তিনি সর্বমহলে ভূয়শী প্রশংশিত হয়েছেন। এরকম নানা কারণে তিনি সর্বমহলে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত পাংশা উপজেলা। এ উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ২লাখ ১৬হাজার ১শত জন। এর মধ্যে পুরুষ ১লাখ ১০হাজার ১৮৭ ও নারী ১লাখ ৫হাজার ৯১১জন ও হিজরা ২জন। অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে ৭৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৯২হাজার ১৮৫জন ভোটার তাদের ভোট প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে ১হাজার ৬৬৬টি ভোট বাতিল বলে গণ্য করা হয়। ভোট গণনা শেষে জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ অলিউর রহমান প্রাথমিক বেসরকারীভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।
+ There are no comments
Add yours