বটগাছের গোড়ার উইপোকার ঢিবিকে মাজার বানিয়ে প্রতারণা

মুখরোচক কাল্পনিক নানা গল্প সৃষ্টি করে বটগাছের নিচে উইপোকার ঢিবিকে বানানো হয়েছে মাজার। যার নাম রাখা হয়েছে উইরপোতা মাজার। আর সেই মাজারেই মানত করলেই নাকি মেলে সকল সমস্যার সমাধান। তাই হাজার হাজার মানুষ এখানে মানত করে ছাগল, মোরগ-মুরগী ও নগদ টাকাসহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে যান। এমন আজব এক মাজারের সন্ধান মিলেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর-রঘুনাথপুর গ্রামে। তবে এসব মানতের টাকা, ছাগল, মুগরী ও অন্যান্য জিসিসপত্রকোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, অনেক বছর আগে স্থানীয় নুর আমিন খা নামে এক ব্যক্তি হঠাৎই সরকারী জমির ওপর গড়ে ওঠা একটি বট গাছের গোড়ায় উইয়ের টিবিতে ভক্তি করা শুরু করেন। এরপর থেকে এখানে প্রতিবছর ওরস পালন করতেন তিনি। দূর-দুরান্ত থেকে এখানে আসতে শুরু করে ভক্তবৃন্দ। ছাগল, মোরগ-মুরগী ও নগদ টাকাসহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে যান ভক্তরা। আবার একই মাজারে হিন্দুরাও এসে ভক্তি করেন। সে কারণে মাজারের মধ্যে মাটির তৈরি ছোট আকৃতির বেশ কিছু মূর্তি রাখা রয়েছে। মাজারটি প্রতিষ্ঠিত করার পর সেখানে প্রতি বছর ওরস করা হতো। তবে করোনা মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত এখানে কোন ওরস হয়নি। দুই বছর আগে মারা যান নুর আমিন। বর্তমানে স্থানীয় কিছু যুবক এই উইয়ের টিবিকে ঘিরে মাজার ব্যবসা শুরুর পাঁয়তারা করছে।


গত ১ লা বিকেলে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উইপোকার টিবিকে ঘিরে একটি পাকা ঘর তোলা হয়েছে। ঘরের ভেতরে মাটির তৈরি ছোট ছোট মূর্তি রাখা আছে। বাইরে একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে।
ব্যানারে লিখা রয়েছে, উইরপোতা মাজারে আগামী ৩রা মে পবিত্র ওরস শরীফ। উক্ত ওরসে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই শরিক হওয়ার জন্য দাওয়াত করা যাইতেছে। যে সকল ভক্তদের মানত আছে তারা সকাল সকাল নিয়ে আসবেন।
এসময় স্থানীয় মান্নান মাষ্টার, রহমান খা, মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এখানে মাজার বলতে কিছু নেই। নুর আমিন খা নামে এখানে একজন প্রতিবছর শিরনী করতো। তবে করোনার সময় থেকে তা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে এলাকার কিছু যুবক এটাকে মাজার আখ্যা দিয়ে ব্যানার টাঙিয়ে ব্যবসার পাঁয়তারা করছে। এরা প্রকাশ্যে শিরক করছে। এলাকায় এই ভন্ডামি ব্যবসা বন্ধ করা হোক।
রাজবাড়ী জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি হাফেজ মাওলানা মোঃ ইলিয়াস মোল্লা বলেন, মাজার পূজা করা হচ্ছে সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে শিরকের শামিল। আমরা এ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ওই এলাকার মুসলমান ভাইদের কাছে ইসলামের বাণী পৌছানোর ব্যবস্থা করবো। যারা এ ধরণের শিরক করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাইবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এমন ঈমানবিধ্বংসী শিরকি কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন।

+ There are no comments

Add yours