কারিতাস বরিশাল অঞ্চল আইডিপিডিসি প্রকল্প রাজবাড়ী সদরের আয়োজনে দূর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের উপর বিশেষ সেমিনার এবং গাছ বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার ১২ টি গ্রাম থেকে ৩২ জন নারীর অংশগ্রহন করে।
আজ ৩ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার সকালে রাজবাড়ী সদরের উপজেলা হর্টিকালচার সেন্টার সভা কক্ষে এই আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে কারিতাস বরিশাল অঞ্চলের আইডিপিডিসি প্রকল্পের রাজবাড়ী সদরের সি.ডি.ও বার্থলোমিয় গোমেজ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার উপ সহকারী প্রকৌশলী বিজয় কুমার প্রামানিক।

বিশেষ অতিথী হিসেবে বক্তব্যে রাখেন কারিতাস বরিশাল অঞ্চল আইডিপিডিসি প্রকল্পের জুনিয়র কর্মসূচি কর্মকর্তা সঞ্জীব চন্দ্র রায় ও রাজবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টার এর উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মোঃ নাছির উদ্দিন তালুকদার।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে কারিতাস বরিশাল অঞ্চলের জে.পি.ও সঞ্জীব চন্দ্র রায় মানুষসৃষ্ট দুর্যোগ ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ উভয় দিক নিয়েই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা কিংবা ভূমিকম্প আমাদের নিয়মিত হুমকির মধ্যে ফেলছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও ঘন ঘন ও তীব্র হয়ে উঠছে। একইসঙ্গে তিনি মানুষসৃষ্ট দুর্যোগের কথাও তুলে ধরেন, যেমন অবৈধ দখল, জলাশয় ভরাট, অপরিকল্পিত নগরায়ন, রাসায়নিক সারের অতিব্যবহার এবং শিল্পবর্জ্য নিঃসরণ, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। তিনি বলেন, এসব কর্মকাণ্ডের ফলে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে, জলবায়ু বদলে যাচ্ছে, এবং মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।
তাই মানুষসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক উভয় ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমন্বিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

সেমিনারে বক্তারা বর্তমান প্রেক্ষাপটে কৃষি খাতে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেন।
তারা বলেন, অতিবৃষ্টি, খরা, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষি উৎপাদনে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ছে। বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতা ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে। এতে মাটির প্রাণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা শুধু ফসল উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করছে না, বরং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বড় কারণ হিসেবেও কাজ করছে।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা পরিবেশবান্ধব কৃষি চর্চা, জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষি পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বক্তারা সরকারের পাশাপাশি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং কৃষকদের সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান, যেন কৃষি খাত আরও টেকসই ও দুর্যোগ সহনশীল হয়ে ওঠে।
এসময় কারিতাস রাজবাড়ী সদর উপজেলার সি.ডি.এ মিন্টু সাহা ও দুর্জয় রায় উপস্থিত ছিলেন।