রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে কেন বিজ্ঞান বলা হয়

অনেকেই প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি আসলেই বিজ্ঞান? সাধারণত, বিজ্ঞান বলতে আমরা বুঝি প্রকৃতি ও বস্তুজগতের নিয়ম নিয়ে গবেষণা করা বিষয়। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান তো কোনো পরীক্ষাগারে গবেষণা করা হয় না! তাহলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে কেন বিজ্ঞান বলা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের বুঝতে হবে— বিজ্ঞান কী এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান কীভাবে এর অন্তর্ভুক্ত?

বিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান: সংজ্ঞা ও সম্পর্ক

বিজ্ঞান শব্দের অর্থ বিশেষ জ্ঞান। এটি হতে পারে গবেষণালব্ধ, শৃঙ্খলাবদ্ধ বা নিয়মতান্ত্রিক জ্ঞান। উদাহরণস্বরূপ, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান পরীক্ষামূলক (Experimental) বিজ্ঞান, যেখানে গবেষণার মাধ্যমে বস্তুগত নিয়ম জানা যায়। অপরদিকে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি সমাজবিজ্ঞান (Social Science), যা মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন নিয়ে গবেষণা করে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে কেন বিজ্ঞান বলা হয় ?

১. গবেষণার কাঠামো:

রাষ্ট্রবিজ্ঞানও অন্যান্য বিজ্ঞানের মতো গবেষণা, বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে গঠিত। রাষ্ট্রের গঠন, শাসনব্যবস্থা, নীতি ও প্রশাসন সম্পর্কে গবেষণা করা হয় নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে।

২. তত্ত্ব ও সূত্র:

প্লেটো, অ্যারিস্টটল থেকে শুরু করে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন তত্ত্ব ও মতবাদ দিয়েছেন, যা দীর্ঘ গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তৈরি। যেমন— গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, সামাজিক চুক্তি তত্ত্ব ইত্যাদি।

৩. পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ:

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন, বিশ্লেষণ করেন এবং সেখান থেকে নতুন তত্ত্ব ও উপসংহার তৈরি করেন। যেমন, মার্ক্সবাদ বা উদারনৈতিক গণতন্ত্রের ধারণা বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে।

৪. শৃঙ্খলাবদ্ধ জ্ঞান:

রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও অন্যান্য বিজ্ঞানের মতো নির্দিষ্ট কাঠামো ও শৃঙ্খলাবদ্ধ পদ্ধতিতে জ্ঞান সংরক্ষণ ও প্রয়োগ করা হয়। এটি শুধু মতামতের ওপর নির্ভর করে না, বরং যৌক্তিক বিশ্লেষণ ও প্রমাণনির্ভর।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অন্যান্য সমাজবিজ্ঞান

রাষ্ট্রবিজ্ঞান যেমন সমাজবিজ্ঞানের অংশ, তেমনি এটি অর্থনীতি, ইতিহাস ও আইনশাস্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। অতীতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সমাজবিদ্যার (Social Studies) অংশ হিসেবে ধরা হলেও এখন এটি সমাজবিজ্ঞানের (Social Science) গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে স্বীকৃত। একইভাবে নৃতত্ত্ব (Anthropology) এখন নৃবিজ্ঞান নামে পরিচিত হয়েছে।

উপসংহার
রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিছক একটি মতবাদ নয়, বরং এটি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ বিজ্ঞান, যা রাষ্ট্র, সরকার, নীতি ও প্রশাসন নিয়ে গবেষণা করে। যদিও এটি পরীক্ষাগারে গবেষণার পরিবর্তে বাস্তব সমাজ ও ইতিহাসের ভিত্তিতে কাজ করে, তবুও এর গবেষণা পদ্ধতি ও বিশ্লেষণ কাঠামো একে বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

উপসংহার

রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিছক একটি মতবাদ নয়, বরং এটি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ বিজ্ঞান, যা রাষ্ট্র, সরকার, নীতি ও প্রশাসন নিয়ে গবেষণা করে। যদিও এটি পরীক্ষাগারে গবেষণার পরিবর্তে বাস্তব সমাজ ও ইতিহাসের ভিত্তিতে কাজ করে, তবুও এর গবেষণা পদ্ধতি ও বিশ্লেষণ কাঠামো একে বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

সুতরাং, রাষ্ট্রবিজ্ঞান কেবল তাত্ত্বিক আলোচনার বিষয় নয়, বরং এটি বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজকে বোঝার একটি শক্তিশালী মাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *