ভারত-চীন সম্পর্কে অগ্রগতি: সরাসরি ফ্লাইট চালুর আলোচনা

দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে অবশেষে উষ্ণতা ফিরছে ভারত ও চীনের সম্পর্কের মাঝে। এবার সম্পর্কোন্নয়নের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে দুদেশ, কারণ সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় চালুর বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয়েছে দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিকদের মধ্যে। এ নিয়ে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল ভারত-চীনের সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনঃস্থাপন, সীমান্ত পরিস্থিতি, তীর্থযাত্রা সংক্রান্ত সহযোগিতা, এবং আন্তঃসীমান্ত নদীর তথ্য আদান-প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো।

বিশ্লেষকদের মতে, পূর্ব লাদাখের বিতর্কিত অঞ্চল দেপসাং ও ডেমচোক থেকে দুই দেশের সেনা সরিয়ে নেওয়ার পর এই বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীই একমত হন যে, এই পদক্ষেপের ফলে সীমান্তে শান্তি ফিরে এসেছে এবং দুই দেশের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে ভারত-চীনের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছিল। যদিও পরে নানা বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়, তবুও ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হয়নি। একই বছর মে মাসে লাদাখ অঞ্চলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্রতর হয় এবং জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় এক ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে, যেখানে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। চীনের পক্ষেও উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, যদিও সরকারিভাবে সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।

পরবর্তীতে সীমান্তের অস্থিরতা কমাতে উভয় দেশ সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (এমইএ) এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, জয়শঙ্কর এবং ওয়াং ই-এর মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা পুনরায় চালুর পাশাপাশি ভারত-চীন তীর্থযাত্রার সুযোগ সম্প্রসারণ, আন্তঃসীমান্ত নদীর তথ্য বিনিময়, এবং সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এছাড়া, গত মাসে ব্রিকস সম্মেলনের সময় রাশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পরপরই লাদাখ সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়, যা দুই দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।

বৈঠকে জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেন, ভারত ও চীন উভয়ের মধ্যেই মতপার্থক্য থাকলেও, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জি-২০, ব্রিকস, এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)-এর মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে উভয় দেশ একসঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করেছে।

ভারতের বৈদেশিক নীতির ধারাবাহিকতার কথা উল্লেখ করে জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা বহুমুখী এশিয়া এবং বহুমুখী বিশ্ব গঠনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করার বিষয়ে আমরা অত্যন্ত সচেতন এবং আমাদের লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারসাম্য বজায় রাখা।”

এই আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে ভারত-চীনের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *