ফরিদপুর প্রতিনিধি, ফরিদপুরে লাগেজের ভেতর থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের ঘটনার দুই দিনের মধ্যে
রোজিনা (৩০) নামে এক যৌনকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার রাতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে যৌনকর্মের টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝগড়া বিবাদের এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে রোজিনা তার পরিহিত ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে বলে জানায় পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম জানান, গত ২৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফরিদপুর জেলা শহরের গোয়ালচামট নতুন বাসস্ট্যান্ড গোল্ডেন লাইন কাউন্টারের পূর্ব দিকে ১টি পরিত্যক্ত লাগেজ দেখে স্থানীয় লোকজন ৯৯৯এ- কল দিলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় লাগেজের তালা ভেঙে এক পুরুষের লাশ দেখতে পায়।
প্রাথমিকভাবে ওই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় ফরিদপুরের কোতয়ালী থানার এসআই মোঃ শামীম হাসান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার পর পুলিশের একটি টিম মামলাটির তদন্ত শুরু করেন।
পুলিশ সুপার জানান, উন্নত তথ্য-প্রযুক্তি ও স্থানীয় তদন্তের মাধ্যমে জানা যায় গত ২৭ জানুয়ারি সকাল ৮টার দিকে
অজ্ঞাতনামা ১জন বোরকা পরিহিত মহিলা মাহেন্দ্র গাড়ীতে এসে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিকাশ পরিবহনে একটি টিকেট কাটেন এবং লাগেজটি গাড়ির মালামাল রাখার বক্সে রেখে নাস্তা করার কথা বলে পালিয়ে যান।
নির্ধারিত সময়ে গাড়িটি ছাড়ার মুহুর্তে লাগেজের মালিককে না পেয়ে পরিবহনটির কর্তৃপক্ষ লাগেজটি ঘটনাস্থলে রেখে যায়। এ তথ্যের সূত্র ধরে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দঘাট উপজেলার গোয়ালন্দ বাজার থেকে মাহেন্দ্র গাড়ী ও গাড়ীর ড্রাইভারকে শনাক্ত করে পুলিশী হেফাজতে নেয়া হয়। এরপর তার দেয়া তথ্যমতে লাগেজ বহনকারী রিক্সা চালককে
হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে লাগেজ বহনকারীর নাম পরিচয় মেলে। ওই নারীর নাম রোজিনা। পরে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর রুবেল মাতুব্বরের বাড়ীর ২য় তলার ভাড়াটিয়া রোজিনার বাড়ীতে অভিযান চালানো হয়। তবে ঘটনার পর হতে সে পলাতক ছিল।
পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রোজিনাকে (৩০ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৩ টার দিকে ঢাকার কদমতলী
থানার জুরাইন এলাকার জনৈক মোঃ দেওয়ান বাড়ীর ৬ তলা হতে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরো জানান, গ্রেফতারকৃত রোজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে জানায়, প্রায় ১০/১২ বছর ধরে
রোজিনা দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে রয়েছে। তার বয়স যখন ১৪ বছর তার বাবা মা তাকে বিয়ে দেয় । বিবাহের কিছু দিন পর তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর চায়ের দোকানদার জনৈক হাকিমের সাখে তার ২য় বিবাহ হয়। হাকিম মারা যাওয়ার পর সে সুজন নামে এক ব্যক্তিকে ৩য় বিবাহ করে।
সে আরো জানায়, নিহত ব্যক্তির নাম মিলন প্রামানিক। তার বাড়ী পাবনা সদরে হলেও সে রাজবাড়ী জেলায় বিভিন্ন
ইট ভাটায় কাজ করত এবং মাঝে মধ্যে যৌন পল্লীতে আসত। গত ২৬ জানুয়ারি দিবাগত রাতে মিলন তার ভাড়া বাসায় আসে এবং রাত আনুমানিক ২টার দিকে তাদের মধ্যে টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে মিলন রোজিনার মাকে তুলে অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ দিলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে তার পরিহিত ওড়না দিয়ে গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে।
এরপর তাকে খাট হতে নামিয়ে লাশটি কালো রঙের ১টি কম্বল, ১টি সাদা লাল বেগুনী রঙের বড় বেডশীট, একই
রঙের ৩টি বালিশের কাভার দ্বারা মুড়িয়ে তার ঘরে থাকা বড় ১টি লাগেজের ভিতরে রাখে। পরে সকাল সাড়ে ৬টায়
৬শত টাকা ভাড়া মিটিয়ে লাশ ভর্তি লাগেজটি নিয়ে রিক্সা যোগে গোয়ালন্দ বাজারে যায়। সেখান থেকে ফরিদপুর
যাওয়ার জন্য ৬শত টাকা দিয়ে ১টি মাহেন্দ্র গাড়ীতে লাশ ভর্তি লাগেজসহ সে ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ডে গোল্ডেন
লাইন কাউন্টারের পূর্ব পাশে বিকাশ পরিবহনের সকাল ৮টা ২৫ মিনিটের গাড়ীতে টিকিট কাটে এবং লাশ ভর্তি লাগেজটি গাড়ির হেলপারের সহায়তায় গাড়ীর বক্সের সামনে রাখে। গাড়ী ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হলে কৌশলে নাস্তা খাওয়ার কথা বলে সে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হাসানুজ্জামানসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিতছিলেন।
+ There are no comments
Add yours